দীর্ঘ প্রতীক্ষা পর যমুনা নদীর ওপর নবনির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় স্বপ্নের যমুনা রেল সেতু দিয়ে দ্রুতগতিতে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলেছে।
আজ রবিবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় দুটি ইঞ্জিনসহ ৬টি বগি নিয়ে সর্বোচ্চ ১২০ কিমি গতিতে ট্রেন দুটি চলাচল করছে। ট্রেন দুটি আপ ও ডাউন টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত সিরাজগঞ্জে আজ রবিবার দিনভর এবং আগামীকাল সোমবারও (৬ জানুয়ারি) চলাচল করবে। এর আগে ২৬ নভেম্বর ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে।
যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মাইনুল ইসলাম জানান, প্রথমে ৪০ এবং পরে ধীরে ধীরে ধীরে গতি বাড়িয়ে ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রায়াল ট্রেন চালানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়েনি। আগে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ২০-২৫ মিনিট লেগেছে, নতুন যমুনা সেতু দিয়ে মাত্র আড়াই থেকে তিন মিনিট সময় লাগবে সেতু পার হতে। জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারিতে সেতুটি উদ্বোধন করা হবে।
যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বলেন, ‘সেতুটির কাজ পুরোপুরি শেষ। পরীক্ষামূলকভাবে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের যমুনা রেলসেতু দিয়ে সর্বোচ্চ ১২০ কিমি বেগে দুটি ট্রেন পাশাপাশি চলাচল করবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি জানুয়ারি শেষে অথবা ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হবে। পরীক্ষামূলক ট্রেন চলার সময় রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেতুটিতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কিনা সেজন্য পরীক্ষামূলকভাবে এ ট্রেন চলাচল করছে।’
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে থাকে। গতি কমের কারণে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটতে শুরু করে শিডিউল বিপর্যয়, বাড়তে থাকে যাত্রী ভোগান্তি।
এসব সমস্যা সমাধানে তৎকালীন সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৬ হাজার ৭৮১ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নাম দিয়ে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের এই সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। নির্মাণ ব্যয়ের মধ্যে ৭২ ভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি সেতুর নাম পরিবর্তন করে ‘যমুনা রেলওয়ে সেতু’ নামকরণ করেছে।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন রেল সেতু চালু হলে ডাবল লাইনে দ্রুতগতিতে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সাথে ট্রেন চলাচলের আন্ত সংযোগ সৃষ্টি হবে।